ছোট বেলায় আমাদের পুকুরের মাছ চোর ধরার গল্প।। এপ্রিল -০৫/০৪/২০২৩।।

in hive-129948 •  2 years ago 

☬নমস্কার সবাইকে☬

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই আপনারা... ? আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন সুস্থ আছেন। প্রত্যেকে তার পরিবার নিয়ে সুখে আছেন। আজকের নতুন একটা ব্লগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।

ছোটবেলা থেকেই চোর ধরার এক দারুন অভিজ্ঞতা ছিল আমার। কেন জানিনা চোর ধরতে খুবই ওস্তাদ ছিলাম আমি এবং চোর দেখলেই বুঝতে পারতাম এটা চোর। এইবার কথা হচ্ছে যে চোর ধরায় আমি এত অভিজ্ঞ ছিলাম কেন। এর পেছনে দুটো কারণ হতে পারে, প্রথম কারণ হলো যে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটা অন্যরকম পাওয়ার আমার ভেতর ছিল অথবা আমি নিজে ছোট খাটো চোর ছিলাম এজন্য হয়তো চোর দেখলেই বুঝতে পারতাম। তবে আমার কাছে মনে হয় দ্বিতীয় কারণটাই যুক্তিযুক্ত। কিছুদিন আগেও হয়তো একটা চুরির গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। যেখানে চুরি করতে গেছিলাম আমরা আর আজ যে গল্পটা শেয়ার করব সেটা হল আমাদের বাড়ির পুকুরে মাছ চুরির গল্প।যেখানে বাইরের লোক এসছিলো আমাদের পুকুরে মাছ চুরি করতে।

thief-6733125_1280.png
সোর্স

আমাদের গ্রামের বাড়ির পুকুরটা প্রায় তিন বিঘা জমির উপর ছিল। সমস্যা ছিল হল পুকুরের চারপাশ জুড়ে ছিল অসংখ্য গাছপালা সুতরাং কে কোথায় ঢুকে মাছ ধরছে বা কোথায় কে ঘুপটি মেরে বসে রয়েছে সেটা লক্ষ্য করা যেত না। আমাদের বাড়ি ছিল পুকুরের উত্তর পাশে। পুকুরের পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে ছিল টুকটাক বসতি তবে দক্ষিণ পাশটা ছিল একেবারেই ফাঁকা। কারণ তার পরই ছিল আরো একটা বড় তেতুল গাছ এবং তেঁতুল গাছ পেরিয়ে আরো একটা বড় পুকুর এবং সেই পুকুরের পড়ের পরে গিয়ে আবার বসতবাড়ি। তবে মাঝখানের এই জায়গাটা খুবই ফাঁকা ছিল। লোকজন খুব বেশি একটা যেত না। এটা যেহেতু ছোটবেলার কথা তাই ওই সময়টাতে আমাদের পুকুরে আবার ঠাকুর দাদা মাছের চাষ করত এবং সেই মাছ বাজারে বিক্রি করতো। তবে একবার পুকুরে বিষ দিয়ে দেওয়ার কারণে পরবর্তীতে মাছ চাষ করা বন্ধ করে দেয়। কারণ এরপর বাবা জেঠু সবাই চাকরি পেয়ে শহরে চলে আসে।

খুব সম্ভবত গ্রামে আমি পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত ছিলাম, তারপর শহরে চলে আসি। তাই গ্রামের সবাইকে ঠিকঠাক মতো চিনতাম না। তাছাড়াও সবার সাথে ঠিকঠাক করে কথাও বলতাম না। সেইবার পুজোর ছুটিতে আমরা পুরো পরিবার মিলে গ্রামের বাড়ি ঘুরতে গেলাম। আমার প্রথম কাজই ছিল গ্রামে গিয়ে আগে পুকুর পাড়টা ভালো করে ঘুরে দেখা। সেখানে যেতেই আমাদের পাশের বাড়ির এক দিদি আমাকে বলল যে ইদানিং তোদের পুকুরের মাছ চুরি হচ্ছে। এ কথা শুনে তো আমি প্রচন্ড পরিমাণে রেগে গেলাম। তারপর আবার সেই দিদিটা বলল যে আমিও তোদের বাড়ি যাচ্ছি, চল গিয়ে সব বিস্তারিত বলছি তোর বাবা জেঠু কে। দিদি টা বাড়ি এসে সবাইকে যেটা বলল সেটা আসলে আসলে সহ্য করার মতো ছিল না। তিনি বলল যে তোমরা এখান থেকে যাওয়ার পরে গ্রামের অধিকাংশ লোকই মাছ কেন বন্ধ করে দিয়েছে সময় সুযোগ পেলেই তারা তোমাদের পুকুর থেকে মাছ চুরি করছে এবং যদি সেরকম সুযোগ পায় তাহলে মাছ বিক্রিও করছে।

thief-4173477_1280.jpg
সোর্স

কিছুদিন আগেও নাকি দিদিটা হঠাৎ করে রাত্রে বাথরুমে যাওয়ার পথে দেখে যে পুকুর পাড়ে কে যেন লাইট জ্বালিয়ে বসে রয়েছে রাত তখন একটা থেকে দুটো বাজে। তখন পুকুর পাড়ে কে বলে চিৎকার করতে লোকটা সবকিছু গুটিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে চলে যায়। যদিও মুখ চিনতে পারেনি, তারপরও আফসা আফসা আলোতে যেটা দেখেছিল সেটা আমাদেরকে বলল। প্রথম কথা হল ছোটবেলা থেকেই আমি মানুষকে প্রচন্ড পরিমাণে সাহায্য করি। আমাদের বাড়ির আম, জাম, কাঁঠাল জাতীয় যত ফল ছিল ইন ফ্যাক্ট মাছ ধরতেও অনেককে সাহায্য করতাম। তবে চুরি করাটা আমি কোনদিনও পছন্দ করিনি। তুমি বলে আমার বাড়ি থেকে যা খুশি দিয়ে যাও আমার সমস্যা নেই, তবে যদি চুরি করে নিয়ে যাও তাহলে আমার থেকে খারাপ হয়তো আর কেউ হতে পারে না। ঐদিন রাতে বাবা জেঠু সিদ্ধান্ত নিল যে এই চোরকে ধরবে। চোর ধরতে পারলেই মোটামুটি একটা ভালো রকমের প্যাদানি দিলে বা বেঁধে রাখলে হয়তো অন্য কেউ পরবর্তীতে আসার সাহস পাবে না।

যাই হোক আটঘাট বেঁধে আমি, বাবা, আর জেঠু রেডি হলাম, যে আজ রাতেই যে করেই হোক চোর ধরবো। আমাদের বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে আমরা সবাই লাইট নিয়ে একটা জায়গায় চুপটি মেরে বসে থাকলাম। তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো মশার কামড়, এত পরিমাণে মশাই কামড়াচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল ওই দিনই হয়তো সবার ডেঙ্গু হয়ে যাবে। যাইহোক ঘন্টাখানেক এভাবে চুপটি করে বসে থাকার পরও চোরের কোন হদিস পাওয়া গেল না। পরবর্তীতে আমার প্রচন্ড ঘুম আসছিল তাই সেখান থেকে বাড়ি চলে আসলাম। কিন্তু বাবা জেঠুর তখনও সেখানে ঘুপটি মেরে বসেছিল। এরপর কি হয়েছিল সেটা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বাবার কাছে জিজ্ঞাসা করতে গেলে বলে যে ওই দিন রাতে কেউ চুরি করতে আসেনি। সুতরাং আমাদের আরো দুই একদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে এইবার চোর ধরার প্রস্তুতি ছিল জবরদস্ত। ঠিক তার দুদিন পর আবারো সিদ্ধান্ত নিলাম যে আজকে একটু অন্যরকম পন্থা অবলম্বন করব চোর জন্য। যদি আসে চুরি করতে তাহলে আমাদের হাত থেকে ছুটে যাওয়ার কোন অপশন নেই চোরের।

চলবে....🏃

burglar-4925202_1280.jpg
সোর্স

🧘পোস্ট বিবরণ🧘


শ্রেণীগল্প।
লোকেশনখুলনা, বাংলাদেশ।
----
যাইহোক আজকের পর্ব এই পর্যন্তই ছিল। আশাকরি আপনাদের ভালো লেগেছে আজকের পর্বটি। আর ভালো লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে নতুন এবং ভালো কিছু করার উৎসাহ যোগায়। ভালো থাকবেন সবাই।

🎯ধন্যবাদ সবাইকে🎯

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

কিছু মানুষ আছে যারা সুযোগ বুঝে চুরি করে,আর তারা সারাক্ষণ সুযোগের সন্ধানেই থাকে। আপনারা শহরে থাকার কারণে অনেকেই পুকুর থেকে মাছ চুরি করে নিয়ে যায়। আর এটা খুব ঘৃণিত একটি কাজ বলে আমি মনে করি। যাইহোক আপনারা চোর ধরার জন্য পুকুর পাড়ে চুপটি করে বসেছিলেন, কিন্তু চোর আসেনি সেদিন। যাইহোক পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

কেউ যদি বলে কয়ে বাড়ি থেকে কোন জিনিস নেয় তাহলে আমার তাতে কোন আপত্তি নেই। তবে চুরি করে নেওয়ার কি আছে। যাইহোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই পোস্টটা পড়ার জন্য।

ঠিক বলেছেন ভাই, চুরি করা মহা অপরাধ। আর এটাকে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। কেউ চেয়ে নিলে সেটা ভিন্ন কথা। যাইহোক ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আসলে একটা চোরই অন্য একটা চোরের তথ্য জানে যে কিভাবে তাকে ধরা যেতে পারে। 😁 যাই হোক আপনার গল্পের প্রথম পর্বে আমরা কোন চোর খুঁজে পাইনি আশা করি পরবর্তী পর্বে কোন একটা চোরকে আপনারা ধরে প্যাদানি দেবেন। 🤭 আর হ্যাঁ একটা কথা ঠিক বলেছেন কেউ যদি কিছু চেয়ে নিয়ে যায় তাহলে দেওয়া যায় কিন্তু চুরি করে নিলে এমনিতেই মাথা গরম হয়ে যায়। যাই হোক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এই সুন্দর পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আমাদের গ্রামের বাড়ির জিনিস এমনিতেই অন্য লোক খেয়ে যায়। তবে অনেকে আছে সেটা বলে নেয় কিন্তু না বলে নেওয়াটা আসলে অন্যায়। এটা আমি কখনো সাপোর্ট করিনা। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই পোস্ট পড়ার জন্য। আর পরবর্তী পর্ব দিয়ে দিয়েছি চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।

আহারে এই পর্বে চোর ধরা হলো না। মনে করলাম চোর ধরে প্যাদানি দেয়ার কাহিনী শুনবো। যাক আরো দুদিন অপেক্ষা করলে হয়তো চোর ধরা পরবে। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।

পেদানি দেওয়ার কাহিনীও একটা আছে, সেটা অন্য কোন এক সময় শেয়ার করব। তবে এই কাহিনীটা এতটাই ইন্টারেস্টিং ছিল যে এখন অব্দি সেটা ভুলতে পারিনি।

ইস! রে চোর কিভাবে ধরে সেই ব্যাপারটা জানার জন্য চেয়েছিলাম শেষমেষ কিন্তু গল্পটা শেষ হলো না। আপনি ঠিক বলছেন যারা চোর তাদের কিন্তু চোর ধরতে খুব সহজ হয় কারণ ভাল ফন্দি জানা থাকে তাই😍। বেশ মজা পেয়েছি গল্পটি পড়ে তবে এখনো মজার কাহিনী শেষ হয়নি পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

এই চোর ধরার কাহিনীটা এতটাই ইন্টারেস্টিং ছিল যে, সেই কথা এখনো অব্দি আমার মনে আছে। যাইহোক আপু পরের পর্ব দিয়ে দিয়েছি চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।