আসসালামু আলাইকুম/ আদাব
বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন। নিশ্চয়ই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো সময় কাটাচ্ছেন। আমিও ভালো আছি বের হয়েছিলাম সেখান থেকে এসে একটি পোস্ট লেখা শুরু করে দিলাম। মেয়েকে নিয়ে আসা নিয়ে যাওয়া কোচিংয়ে আমার নিত্যদিনের কাজ। তবে ওদের বাবা থাকলে আমি যায় না উনি যখন অফিসে যায় তখন আমাকে যেতে হয়। যাক সেদিকে আর যাচ্ছি না আজকের ব্লগিংয়ে আপনারা সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি। প্রতি সপ্তাহে একটি করে ক্রিয়েটিভ রাইটিং শেয়ার করার চেষ্টা করি। তাই আজকে আবার উপস্থিত হয়েছি।
নিজের বিবেক কে জাগ্রত করতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন হয় না!
বন্ধুরা অবশ্যই আপনারা বুঝতে পারছেন। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছু ঘটনা ঘটে যায়। সেটা হতে পারে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে। অথবা সামাজিক ক্ষেত্রে কিংবা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে কোন ক্ষেত্রে হতে পারে। বর্তমান সময়ে সুন্দর একটি লেখার মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। সবাই সেখানে নিজের মতামত গুলো নিজের অনুভূতি গুলো সবার সাথে শেয়ার করতে পারেন। এখানে নিজেই নিজের মতো করে যার যার মত লিখতে পারেন সবাই এসে মতামত ব্যক্ত করেন। অনেক সময় দেখা যায় এমন কিছু লেখা আসলে হাস্যকর হয়ে ওঠে। কারণ যাদের কাছে বিবেকের কোন উপস্থিত থাকে না তারা সেই বিষয়ে লেখালেখি করে।
বর্তমান সময়ে সামাজিক দিক দিয়ে যদি আলোচনা করতে চাই তাহলে দেখা যায়, এখনও কিছু কিছু সমাজ ব্যবস্থা চালু আছে খুব সুন্দর ভাবে পরিচালিত হয়। তবে আমরা যেহেতু গ্রামে আছি আমাদের এখানে সামাজিক কাঠামো এখনো ঠিকিয়ে আছে। সেটা বিচার সালিশের ক্ষেত্রে হোক কিংবা কোন সামাজিক আচার অনুষ্ঠানেও। সামাজিকভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে করে থাকেন আমরা সব কাজ। মানুষ সঙ্গবদ্ধ জীব। মানুষ কখনো একা বসবাস করতে পারে না। মানুষকে বিপদ-আপদে সুখে দুঃখে সামাজিক অনুষ্ঠানে সমাজের প্রয়োজন হয়। মানুষ বিপদে পড়লে মানুষকে সহায়তা করে। মানুষ তার সুখের দিনে সবাইকে ভাগ করে নিতে চাই সেই সুখ গুলো। বাস্তব একটি ঘটনা গ্রামের—
নজরুল ছিলেন একজন কৃষি পরিবারের ছেলে। তারা ছিলেন তিন ভাই। এখন নজরুল হচ্ছে সবচেয়ে পরিবারের ছোট ছেলে। নজরুলের মেজ ভাই হচ্ছেন জসিম উদ্দিন সেই ও ব্যবসা করে। তাদের বড় ভাই হচ্ছেন হাকিম মিয়া সেই প্রবাসে থাকেন। যখন নজরুল, জসিম ছোট ছিলেন তখন হাকিম মিয়া তাদেরকে পড়ালেখা করিয়েছেন এবং তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সবকিছুতেই তাদের খরচ বহন করেছেন। যেহেতু হাকিম মিয়া পরিবারে তাদের মা-বাবা দুইজন ছিল না তাই হাকিম মিয়া সবকিছু হ্যান্ডেল করতেন। এখন হঠাৎ করে হাকিম মিয়া বিয়ে করে। হাকিম মিয়ে বিয়ে করার পরে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত হাকিম মিয়া তার ছোট দুই ভাই কে দেখাশোনা করেছেন জায়গা সম্পত্তির ক্ষেত্রেও বাদ দেইনি বেশ সুন্দর করে সব কিছুর ক্ষেত্রে খরচ বহন করেছেন। হাকিম মিয়া ঘর তৈরি করলে সেই ঘরটি তারা ছোট দুই ভাইকে দিয়ে অন্যত্র ঘর করলেন। যেহেতু তাদের মধ্যে কথা আর মিল হচ্ছে না।
এখন হচ্ছে জসীমউদ্দীন বিয়ে করলো পাশের বাড়ির এক মেয়ে। নজরুল বিয়ে করলো একটা সম্পর্ক করে। কিন্তু হাকিম মিয়া চলে যায় নজরুল এবং জসিম উদ্দিনের সেই পরিবার থেকে। তাদের মধ্যে মিল বন্ধন হচ্ছিল না। সম্পত্তির ব্যাপারে তাদের মধ্যে একটু ঝগড়াঝাঁটি হয়ে গেল। এখন সামাজিকভাবে তারা বিচার সালিশ করলেন। বিচার সালিশের ক্ষেত্রে দেখা গেলো জসিম উদ্দিন খুব প্রভাব দেখাচ্ছিলেন। যেহেতু তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে সাপোর্ট করছিলেন এবং অনেক কুবুদ্ধি দিচ্ছিলেন। জসীম চাই কি নজরুলকে ঠকানোর জন্য। যেহেতু হাকিম মিয়া বাড়িতে ছিল না ভিটে বাড়ি নিয়ে বাইরে চলে গেছেন তাই ঘর থেকে দুই ভাগ করে নজরুল এবং জসিমকে দিতে চাইলো হাকিম মিয়ে।
সেই বিষয়ের মধ্যে অবশ্যই হাকিম মিয়া ছিলো বিচারে। যেহেতু জসীমউদ্দিন তার ছোট ভাই নজরুলকে ঠাকাতে চাই তাই হাকিম মিয়া নজরুলের পক্ষ নিল। এমনিতে নজরুলের পক্ষে কেউ ছিলনা। কারণ জসীমউদ্দিনের শ্বশুরবাড়ির প্রভাব খাটিয়ে সবাই জসীমউদ্দীনের পক্ষ নিলো। যে সব বিচার সালিশের লোকজন আসলো তারাও এমন করলো জসীমের পক্ষ নিয়ে। সামান্য কয়েকজন নজরুলের এবং হাকিম মিয়ার পক্ষ নিল। সত্যি কথা বলতে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমনই এখানে কোন বিচার সালিশ করতে গেলে ধর্মীয় দোহাই দেয় বেশি। কারণ মানুষ আসল- নকল জিনিসটা বুঝতে চায় না বিবেক বলে একটি কথা। যারা বিচার সালিশ করতে যায় তাদের কাছে ন্যূনতম বিবেক শিক্ষার যোগ্যতা গুলো থাকে না। থাকে না কোন ধর্মীয় গাইডলাইনের পড়ালেখা। সামান্যটুকু জ্ঞান থাকে সেগুলো নিয়ে ধর্মীয় দোহাই দিয়ে অন্যদেরকে ঠকাতে কোন দ্বিধা বোধ করে না। তবে এখানে আমি ধর্মকেই ইঙ্গিত করতেছি না।
কারণ আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা অসৎ কাজে ধর্মকে ব্যবহার করে থাকেন। তারা এমন ভাবে ধর্মীয় দোহাই দেয় যে ১- ১১ এগারো করে বোঝাতে চেষ্টা করেন। এখন সবাই নজরুলকে টকাতে চেষ্টা করল। আংশিক কিছু মানুষ ছিল যারা নজরুলের পক্ষ নিল। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে জসিম উদ্দিন জিতে যাচ্ছে। এখন নজরুল হেরে গেল। কারণ পুরো ঘরের বেশ অংশ জসিম উদ্দিন নেবেন কারণ সেই কিছু টুকটাক ঘরের কাজ করছে। এখন কথা হচ্ছে হাকিম মিয়া ঘর তৈরি করেছেন তখন হাকিম মিয়াও অংশীদার। এখন হাকিম মিয়ার কথা হচ্ছে যে সে ঘর নিবে না কিন্তু দুইজনকে ভাগ করে দিতে চাই। তবে হাকিম মিয়ার বিবেক ঠিক ছিল। কিন্তু জসিমের বিবেক স্থির ছিল না। নজরুল আবার রেগে মেগে ঘর থেকে চলে যেতে চাই।
এভাবে সবাই নজরুলকে ঠকিয়ে দিল এবং জসিম উদ্দিনকে জিতিয়ে দিল।
বন্ধুরা একটা বিষয় খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন একটি পরিবারের মধ্যে ধন-সম্পদ অর্জনের জন্য সবার ভূমিকা থাকে না। সে ঘরের ক্ষেত্রে একজনেরই ভূমিকা বেশি থাকে। বেশি নেওয়ার দরকার হলে হাকিম মিয়ার বেশি পাওয়া দরকার। কিন্তু সেই যদি তার অংশ নিতে চাইনা সবাইকে সমান ভাবে ভাগ করে দিতে চাই তাহলে সেটা ক্ষেত্রে কি বিবেকের উপস্থিতি নেই? আমাদের সমাজ কাঠামো এমন হয়ে গেছে যেখানে রাজনৈতিক বলেন বা ধর্মীয় দোহাই দিয়ে দুর্বলকে ঠকিয়ে সবলকেই জিতিয়ে দেই। এমন অসুস্থ রাজনীতি এমন অসুস্থ মন মানসিকতায় কখনো বিবেক জাগ্রত হয় না।
বিবেককে জাগ্রত করতে হলে যথেষ্ট পরিমাণ শিক্ষার দরকার হয় না। যদি বিবেক থাকে একজন কুলি মজুরেরও থাকে। যদি বিবেক তাকে একটা রিক্সাওয়ালারও থাকে। যদি বিবেক থাকেনা হাজার লেখাপড়া করেও তাদের মধ্যে বিবেকের উপস্থিত লক্ষ্য করা যায় না। এটা হচ্ছে আমাদের সমাজের রীতি নীতি আমাদের সমাজের ব্যবহার। জোর করে বল প্রয়োগ করে ক্ষমতা দেখিয়ে অন্যদেরকে শোষণ করা হচ্ছে আমাদের সমাজের মূল হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনশেষে বলবো সবাই একটু জাগ্রত হোন। আসলে আমরা সবাই মানুষ জাতি। আমরা সবাই মরণশীল। আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে দিনশেষে সবাইকে চলে যেতে হবে।
অন্যদেরকে ঠকিয়ে আমরা কখনো জিততে পারবো না। যেহেতু আমাদের জন্য মৃত্যু অবধারিত সেই হিসাব করে আমাদেরকে সবাইকে সামনের দিকে এগিয়ে চলার পথ ঠিক করতে হবে। ধন্যবাদ সবাইকে সময় দিয়ে আমার পোস্ট ভিজিট করার জন্য।
লেখার উৎস | নিজের অনুভূতি থেকে |
---|---|
ইমেজ সোর্স | ভিক্টিজি ডক কম |
অবস্থান | কক্সবাজার, বাংলাদেশ |
ক্যাটাগরি | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য।
🥀আল্লাহ হাফেজ সবাইকে🥀
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে অনেক ভালবাসি। রান্না করতে আমি অনেক পছন্দ করি। তাছাড়া সময় পেলে ভ্রমণ করি আর প্রকৃতিকে অনুভব করি। ফটোগ্রাফি করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমি মাঝে মাঝে মনের আবেগ দিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি। আমার প্রিয় শখের মধ্যে তো গান গাওয়া অন্যতম। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের/ভালবাসার কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
শিক্ষার থেকে বেশি প্রয়োজন সুশিক্ষা। শিক্ষিত তো অনেকেই হয় কিন্তু দিনশেষে সুশিক্ষা কয়জন পায় আপু। একদম ঠিক বলেছেন নিজের বিবেককে জাগ্রত করতে শিক্ষার প্রয়োজন হয় না যা আপনি ছোট ছোট গল্প দিয়ে উদাহরণ দিয়েছেন। বেশ ভালো লাগলো পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বিবেক কে জাগ্রত করার জন্য সবচেয়ে বেটার হচ্ছে পারিবারিক শিক্ষা আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/nahar_hera/status/1805316613643944231?t=tuHNWAVItn7Qo38p5sJ-dw&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে আমরা যদি কাউকে কোনো ভাবে ঠকাই, তাহলে একদিন না একদিন আমাদেরকেও ঠকতে হবে। হয়তো আমরা বুঝতে পারবো না এটা কোন কাজের ফল কিন্তু এরকমই হয় সবার ক্ষেত্রে। একজনকে ঠকিয়ে নিজে কখনোই ভালো থাকা সম্ভব না। আসলে মানুষ বিবেক দিয়ে কোন কিছু চিন্তা করে না। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই হয় না, সব মানুষের ভেতর বিবেকটা থাকা সব থেকে বেশি জরুরী। নজরুলকে ঠকিয়ে সবাই দেখছি জসীমউদ্দীনকে জিতিয়ে দিয়েছে। নজরুলের কথা সত্যি খুব খারাপ লেগেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থা তা বুঝে না। একজন আরেকজনকে কিভাবে ঠকানু যায় সেই চিন্তা করে এখন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নজরুলকে এভাবে ঠকানো টা অন্যায় হয়েছে। আমাদের সমাজে এরকম অনেক চিত্র আমরা দেখি। অনেক সময় শিক্ষিত হলেই যে নিজের বিবেক জাগ্রত করতে পারে এমনটা নয়। অনেক মানুষ আছে যারা অশিক্ষিত হয়েও নিজের বিবেক জাগ্রত করে সঠিক কাজটাই করে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ঠিক বলছেন ভাইয়া শিক্ষিত হয়ে যদি বিবেককে জাগ্রত করা না যায় তাহলে এমন শিক্ষার কোন মূল্য নেই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে এখন যদি আমরা কোন মানুষকে ঠকাই তাহলে একটা সময় কোন না কোনভাবে আমাদেরকে ঠকে যেতে হবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম৷ আমরা যদি প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী নিজেকে চালাতে পারি তাহলে আমরা সফল হতে পারব৷ তার বিপরীতে যদি আমরা কোন কিছু করতে চাই তাহলে পরবর্তী সময় সেটি আমাদের নিজের উপর চলে আসবে৷ ঠিক তেমনি নজরুলকে ঠকিয়ে সবাই জসীমউদ্দীনকে জিতিয়ে নিয়েছে৷ আসলে এরকম ঠকানোর বিষয়টি এখন সবার মনোভাবের মধ্যে যেন মিশে গিয়েছে৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি বলবো এখনকার সমাজ, এখনকার রাজনীতি, এখনকার শিক্ষা সব কিছুর মধ্যেই অসুস্থতা বিরাজ করতেছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit