একটি ছাগল ছানার গল্প || শেষ পর্ব

in hive-129948 •  5 months ago 


আসসালামু আলাইকুম


IMG_20240305_174528_771.jpg


হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।


একটি ছাগল ছানার গল্প:



কিছুক্ষণ পর আমি আমার ছাগলটিকে পাতা খাওয়াতে খাওয়াতে বাড়ির দিকে নিয়ে আসলাম। আর ওই ছাগলটা খেদিয়ে দিয়ে আসলাম। এর কিছুক্ষণ পর যখন আমার ছাগলটা বাড়ির মধ্যে নিয়ে এসে আমি একটু আনমনে আমার কাজ করছি, ঠিক ওই মুহূর্তে সে পথের ছাগলটা বাড়ির মধ্যে চলে এসেছে। এরপর আমি যখন তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি, আমাদের বাড়ির উঠানে মাঝখানে ছিল একটি গোলা ঘর। সেই ছাগলটা শুধু গোলাগরের চারিপাশে পাক মারছে কিন্তু বাড়ির গেটের বাইরে যাচ্ছে না। তখন আমার প্রচন্ড রাগ উঠে গেল, আমি একটা নড়ি হাতে নিলাম। তাড়া শুরু করলাম। ছুতে পারলে আঘাত করবো এমন অনুভব। ওই মুহূর্তে সেই ছাগলটা দৌড়িয়ে আমাদের পুরাতন ঘরে বারান্দায় উঠে চলে গেল। আমাদের এই ঘরের বারান্দার পশ্চিম কর্নারে ছাগল রাখা হতো। কারণ ছাগল ঘরের সেই মুহূর্তে ছাগল রাখা হতো না বৃষ্টির পানি হতো, ছাগল ঘর একটু খারাপ হয়ে যেত তাই। আর যেহেতু এই ছাগল আমার, তাই অতি যত্নে রাখার চেষ্টা ছিল তখন। আমার ধাড়ি ছাগলটার বাচ্চা হওয়ার পর থেকে তাদের রাত্রি যাপনের অবস্থান হয়েছিল আমাদের ঘরের বারান্দার মধ্যে।


IMG_20240321_103101_058.jpg



যাইহোক আমি ঘরের মধ্যে গিয়ে ছাগলটাকে ধরে ফেললাম। ছাগলটা ঘরের মধ্যে উঠে আমাকে দেখে কোন ভয় মনে করছিল না। নীরবে জায়গা মতো যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। আমি তার গলা চেপে ধরলাম। এরপর টানতে টানতে বের করে আনলাম উঠানে। এরপর তার পানে নজর করে দেখলাম, আমার চোখ পরলো তার সেই কাটাহেনা চোখের পানি। এটা আমাদের সেই ছাগলের ছা!! এটা আমাদের সেই ছাগলটা। যার মা আর বড় ভাই টা আমার কাছে রয়েছে, আর তাকে চার মাস আগে বিক্রয় করে দেওয়া হয়েছে আমার ফুফুর ননদের কাছে। এটা সেই ছাগল, যে তিন মাস আমার অতি আদরে বড় হয়েছে। এই চার মাসে তার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এইজন্য মোটেও চিনতে পারছিলাম না, বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু চার মাস পরে তার স্মরণে রয়েছে তার মা ভাই এবং তার থাকার জায়গার কথা। শুধু তার পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি চিনতে পারছি না, কিন্তু সে তার ভাইয়ের পাশে আসছে আমার হাত থেকে খাবার খাবার চেষ্টা করছে। আমি শুধু তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম না বুঝে। এর কিছুক্ষণ পর যখন চিনতে পারলাম তখন তাকে বেশ ভালো কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম। আমাদের বাড়ির সবাই ছাগলটাকে দেখে অবাক। হাফ কিলোর বেশি দূরে আমার সেই আন্টিদের বাড়ি, সেখান থেকে চলে এসেছে। এরপর লক্ষ্য করে দেখলাম আমার ছাগলের ধাড়িটা বাড়িতে এসেছে। তখন ওই ছাগলটা তার মা ও ভাইয়ের সাথেই অবস্থান করছে দূরে কোথাও যাচ্ছে না,কেউ কাউকে মারছেও না। মনে হল যেন তার মা ও ভাই তাকে চিনতে পেরেছে।



IMG_20240321_103057_616.jpg



এরপর আমরা সেই ছাগলটিকে আদর যত্ন করে ভালো মন্দ অনেক কিছু খাওয়ালাম। এই ছাগলটিকে তার মা আর বড় ভাই এর সাথে অনেকক্ষণ থাকতে দিলাম। এরপর আমরাও মনে মনে ভাবলাম হয়তো ফুফুর ননদ এতক্ষণ তার ছাগল খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা দুই ভাই ছাগল টা সন্ধ্যার আগে তার বাড়িতে দিয়ে আসব। ঠিক সেভাবে সন্ধ্যার সময় রেডি হলাম ছাগলটাকে আমাদের সেই ফুফুর বাড়িতে দিয়ে আসবো কিন্তু ছাগলটা কিছুতেই যেন আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে চাচ্ছিল না। একটু ভালো জাতের ছাগল,সাত মাসের বেশ বড় হয়ে গেছে। বলতে গেলে তার বড় ভাই টা আমার কাছে রয়েছে, সেই ছোট মনে হচ্ছে। হয়তো সে আন্টি খুব মনোযোগ সহকারে তাকে খাওয়াতেন। এরপর আমি আর আমার ভাই ছাগলটাকে গলায় রশি দিয়ে অতি যত্ন সহকারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, রাস্তায় যেতে যেতে থেমে যাচ্ছে। পিছুটান হয়ে কিছুতে যেতে চাচ্ছিল না। মাঝে মধ্যে আমরা কোলে নিয়েছি কিন্তু বেশি দূরত্ব কোলে নেওয়া যায় না বড় ছাগল। ঠিক এভাবেই আস্তে আস্তে তাকে আমাদের সেই আন্টির বাড়িতে নিয়ে গেলাম। যে দেখছিলাম আমার আন্টি খ্যাতা সেলাই করে উঠছে ছাগল খুঁজতে যাবে বলে। আর এই মুহূর্তে আমরা ছাগলটাকে নিয়ে উপস্থিত।


IMG_20240321_103037_418.jpg



তখন আন্টি বললেন ছাগলটা সবসময় আমার পাশে থাকে,আমি তাকে খুব ভালো-মন্দ খাওয়ায়। কাছ থেকে নড়তে চাইনা, তাই আজকে আমি চরাই করে আসে যেন, সেই উদ্দেশ্যে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম পাড়া ছাগলের পালের সাথে। হয়তো সে ছাগলের সাথে রাস্তায় চোরতে এসে, তার চেনা পথে চোখ পড়াই সে ধীরে ধীরে চলে এসেছে আমাদের বাড়িতে। তবে আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে এতদিন পরেও তার মনে রয়েছে তার জন্মভূমির কথা? মায়ের কথা? ভাইয়ের কথা? আমি কেন জানি ছাগলটার কথা ওই দিন রাত্রে ভাবছিলাম, আর নীরবে কান্না করছিলাম। মাঝেমধ্যে স্মরণে হয় সে ঘটনা, তখনও যেন চোখে জল চলে আসে আমার। ঘটনাটা লেখার মুহূর্তেও চোখের পানি যেন টলটল করছে। কারণ ছাগল ছানা দুইটা জন্মের পর আমি খুব আদরে যত্ন ও আশা নিয়ে তাদের রাখতাম। কিন্তু ছোট ছাগলটার চোখে এভাবে কাটা হিনে যাওয়ায় চোখটা নষ্ট হয়ে যায় এবং তাকে দেখতে খারাপ লাগতো, চোখের ব্যথায় ভালো খেতে পারত না অসুস্থ থাকতো প্রায়, শুকিয়ে গেছিল অনেক,আর অভাবের সংসার। এই সমস্ত কারণে তাকে বিক্রয় করে দেওয়া হয়েছিল। তবে এটা যেন এক অন্যরকম শিক্ষা দিয়ে গেছিল আমার জীবনে। সত্যি একটা অবুলা প্রাণীর ভাইয়ের প্রতি কি-টান! মায়ের প্রতি কি টান! দীর্ঘ চার মাস পরেও সে ছাগল হয়ে কোন কিছু ভুলি নাই। আজকে আমরা মানুষ হয়ে সেটা বুঝিনা। সামান্য স্বার্থের লোভে মাকে অবহেলা করি, ভায়ের মাথায় লাঠি তুলি! এগুলা ভাবলে নিজ থেকে নিজের মধ্যে আঘাত লাগে। এটাই আমরা! বোধশক্তি সম্পন্ন মানবজাতি।


IMG_20240405_160245_090.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিছাগল
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনজুগীরগোফা
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ছাগলের বাচ্চাটি যে এতদিন পর হলেও তার মায়ের কথা ভাইয়ের কথা মনে রেখেছিল বিষয়টা জেনে অবাক হলাম। গল্পটা পড়ে আমার কাছেও বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া ছাগল ছানার এই সুন্দর গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার পোস্ট টি খুব ভালো লাগলো প্রথম পর্বটিও পড়েছিলাম। ছাগলটি এতদিনও আপনাকে এবং আপনার বাড়ি এবং ওর মা ভাইকে ভোলেনি। আপনি এত তাড়ানোর চেষ্টা করেও ওকে তাড়াতে পারছিলেন না। ঠিক বলেছেন আপনি পশুর এরকম প্রেম আর আমরা মানুষরা স্বার্থের জন্য কত কি না করে থাকি। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্ট করে নেয়ার জন্য।

গল্পর দুই পর্ব পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

ছাগলছানা গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো আসলে এই ধরনের পশুপাখি গুলা অনেক মানুষ প্রিয় হয়। এদের ভেতর ভালোবাসা অনেক বেশি যার কারণে রাজার কাছ থেকে ভালোবাসা বেশি পায় তার কাছ থেকে যেতে চায় না। আপনি অনেকদিন পরে ছাগল ছানা দেখে চিনতে পারেনি তবে সে নিশ্চয় আপনাকে চিনতে পেরেছে। বিষয়টা যেন ভালো লাগলো যে ছাগলটি তার বাবা-মা ও ভাইয়ের সাথে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছে।

হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছেন

ধন্যবাদ ভাই।