বন্ধুত্বের সেতু
একটি ছোট গ্রামে ছিল দুটি বন্ধু, রাহুল ও সোহান। তারা একে অপরের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করত, গাছের ডালে চড়ে বেড়াত এবং নদীর পাড়ে সময় কাটাত। তাদের বন্ধুত্ব ছিল অটুট, কিন্তু একদিন একটি দুর্ঘটনা তাদের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরাল।
রাহুল ও সোহান একদিন নদীর পাড়ে মাছ ধরতে গিয়েছিল। সেদিন নদীতে প্রচুর জল ছিল এবং তারা খুব আনন্দে মাছ ধরছিল। কিন্তু হঠাৎ করে একটি বড় ঢেউ এসে তাদের মাছ ধরার জায়গাটিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। রাহুল সাঁতার কাটতে পারত, কিন্তু সোহান সাঁতার জানত না। রাহুল দ্রুত সোহানের দিকে ছুটে গেল, কিন্তু সোহান ভয়ে চিৎকার করতে লাগল।
"রাহুল! আমাকে বাঁচাও!" সোহান কাতর স্বরে বলল।
রাহুল দেরি না করে সোহানের কাছে পৌঁছাল এবং তাকে শক্ত করে ধরল। কিন্তু সোহান আতঙ্কিত হয়ে রাহুলের হাত থেকে ছুটে যেতে চেষ্টা করল। এতে উভয়ের মধ্যে একটি বড় ঝগড়া শুরু হল। রাহুল বলল, "তুমি কেন ভয় পাচ্ছ? আমি তোমাকে বাঁচাবো!" সোহান উত্তরে বলল, "তুমি আমাকে ফেলে চলে যাবে!"
এভাবে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলতে লাগল, এবং শেষ পর্যন্ত রাহুল অসহ্য হয়ে সেখান থেকে চলে গেল। সোহান নদীর পাড়ে একা বসে রইল এবং তার বন্ধু রাহুলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে গেল।
দিনের পর দিন চলে গেল, কিন্তু তাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল। রাহুল ভাবতে লাগল, "আমি কি সত্যিই সোহানকে ফেলে এসেছি?" অন্যদিকে, সোহানও ভাবতে লাগল, "রাহুল কি সত্যিই আমাকে বোঝে?"
একদিন, রাহুল গ্রামের কাছে একটি পুরনো সেতু দেখতে পেল। সেতুটি ছিল ভগ্নপ্রায়, কিন্তু রাহুলের মনে হল, এটি একটি প্রতীক। সে ভাবল, "যদি আমি সেতুটি মেরামত করি, তাহলে হয়তো সোহানের সঙ্গে আমার সম্পর্কও মেরামত হবে।"
রাহুল সেতুর মেরামতের কাজ শুরু করল। সে প্রতিদিন সেখানে গিয়ে কাজ করতে লাগল। কিছুদিন পর, সেতুটি আবার দাঁড়িয়ে গেল। রাহুল তখন সোহানকে ডেকে বলল, "এটি আমাদের বন্ধুত্বের সেতু। আমরা যদি একে মেরামত করতে পারি, তাহলে আমাদের সম্পর্কও মেরামত হবে।"
সোহান সেতুর দিকে তাকিয়ে ভাবল, "এটা কি সম্ভব?" কিন্তু রাহুলের দৃঢ়তা দেখে সে বুঝতে পারল যে বন্ধুত্বের জন্য কিছু করতে হয়।
সোহানও সেতুর মেরামতে সাহায্য করতে শুরু করল। তারা একসঙ্গে কাজ করতে লাগল এবং ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে পুরনো সম্পর্ক ফিরে আসতে লাগল। কাজের ফাঁকে তারা পুরনো স্মৃতি মনে করতে লাগল এবং হাসাহাসি করতে লাগল।
অবশেষে, সেতুটি সম্পূর্ণ মেরামত হল এবং তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরল। সোহান বলল, "আমি জানি, আমাদের বন্ধুত্বের সেতু কখনো ভাঙবে না।"
রাহুল হাসতে হাসতে বলল, "ঠিকই বলেছ! বন্ধুত্বের জন্য আমাদের এই সেতু চিরকাল দাঁড়িয়ে থাকবে।"
এভাবেই রাহুল ও সোহানের বন্ধুত্ব আবার নতুন করে গড়ে উঠল, এবং তারা বুঝতে পারল যে সত্যিকারের বন্ধুত্ব কখনো ভাঙে না, বরং তা আরও শক্তিশালী হয়।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit