তারপর থেকে প্রায় দুই শত বছর (১৯০ বছর) ধরে ইংরেজরা ভারতবর্ষকে পরাধীন রেখে সীমাহীন লুঠতরাজ আর নির্যাতন চালিয়ে গিয়েছে । এখন, ব্রিটিশরা কথায় কথায় ভারী সভ্য সাজে, কিন্তু প্রকৃত কথা হলো তারা চিরটাকালই মুখোশ আঁটা ভদ্রলোক । সুযোগ পেলেই এখনো ছোবল দিতে জানে তারা । ব্রিটিশদের বিশ্বাস করা আর কেউটে সাপের সাথে বন্ধুত্ব করা একই কথা । সীমাহীন উশৃঙ্খল এবং অত্যাচারী নবাব সিরাজউদ্দোলার প্রজা নিপীড়নমূলক কর্মকান্ড, ধর্ম অবমাননা, রাজ অমাত্যদের প্রাপ্য সম্মান না দেওয়া, ইংরেজদের অকারণে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাধা প্রয়োগ এবং অতিরিক্ত কর চাপিয়ে দেওয়া, ফরাসিদের অন্যায়ভাবে বাণিজ্যে বাড়তি সুযোগ করে দেওয়া - এসকলই ছিলো মূলতঃ তাঁর পরাজয়ের কারণ ।
বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর এই সুযোগটাই নিয়েছিলেন । তরুণ ও অপরিণামদর্শী নবাবের বিরুদ্ধে ইংরেজ এবং অন্যান্য রাজ অমাত্যদের এক করেন তিনি । বিশাল এক ষড়যন্ত্র রচিত হয় রাতের আঁধারে । তারই পরিণতি ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন । সমগ্র ভারতের স্বাধীনতা হারানোর সূচনা এই দিনে ।
ঠিক এর একশো বছর পরে ১৮৫৭ সাল । ২৯ শে মার্চ । খুব গরম পড়েছে সেদিন । পশ্চিমবঙ্গের বর্তমানের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার একটা ছোট্ট শহর ব্যারাকপুর । এই শহরের গঙ্গার তীরে ৩৪তম ব্রিটিশ রেজিমেন্টের প্যারেড গ্রাউন্ডে বিকেল ৪ টায় এক ভয়াবহ বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সূচিত হয় মঙ্গল পান্ডে নামক এক ভারতীয় সিপাহীর হাত ধরে । সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ভারতবর্ষে । সূচিত হয় সিপাহী বিদ্রোহের । দীর্ঘ একটি বছর ধরে চলা সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ভারতের আকাশে আবারো স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখতে শেখে মানুষ । ঝাঁসীর রানী লক্ষী বাঈ, মারাঠা পেশোয়া নানা সাহেব, তাঁতিয়া তোপী প্রমুখ বীরের জীবনপণ যুদ্ধেও শেষরক্ষা হয়নি সেদিন । একটি আশার আলো জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেলো ।
কিন্তু, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কিন্তু পুরোপুরি নেভেনি । সেটা প্রথম ভালো ভাবেই টের পাওয়া গেলো যেদিন ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ভুল করে এক ব্রিটিশ কেনেডি পরিবারের উপরে বোমা নিক্ষেপ করলেন । সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠলো ক্ষুদিরামের ফাঁসিতে । সকল বিপ্লবীদের আদর্শ হয়ে উঠলো ক্ষুদিরাম । এক বাঙালি কিশোরের মনে ক্ষুদিরামের এই ফাঁসির প্রতিক্রিয়া হলো খুবই সাংঘাতিক । বয়স তখন তাঁর মোটে এগারো । এই বয়সেই তাঁর চোখে ঝিলিক দিয়েছিল স্বাধীন ভারত গড়ার স্বপ্ন ।
nice
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit